Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

দেশি ফলের পুষ্টি ও জনস্বাস্থ্য

বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু ফল আবাদের জন্য খুবই উপযোগী। বর্তমানে দেশে প্রায় ১৩০ রকম ফলের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৭০ রকম প্রচলিত ও অপ্রচলিত ফলের আবাদ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হচ্ছে। ফল একটি অর্থকরী ফসল। ফল গাছ কাঠ দেয়, ছায়া দেয় এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে।  ফল ভেষজ বা ঔষধিগুণে সমৃদ্ধ। নিয়মিত ফল খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং সুস্থ সবল জীবন লাভ করা যায়। এ সত্ত্বেও আমাদের দেশের অধিকাংশ লোক পুষ্টিহীনতার শিকার। বাংলাদেশের প্রায় ৮৮ ভাগ মানুষ ভিটামিন এ, ৯০ ভাগ মানুষ ভিটামিন সি, ৯৩ ভাগ মানুষ ক্যালসিয়ামের অভাবে ভোগে। আমাদের এ পুষ্টি ঘাটতি পূরণে ফল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
বাংলাদেশ দানাদার জাতীয় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও ফলের চাহিদা এখনও সম্পূর্ণ পূরণ করা হয়নি। ফল আমাদের শরীরে ভিটামিন ও খনিজ লবণ সরবরাহ করে। ফল কম গ্রহণ করার জন্য বাংলাদেশে ভিটামিন ও খনিজ লবণের অভাবজনিত অপুষ্টি যেমন রাতকানা, অন্ধত্ব, রক্তস্বল্পতা, গলগ-, স্কার্ভি, বেরিরেরি এর হার পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের চেয়ে বেশি।
ফলকে রোগ প্রতিরোধক খাদ্য বলা হয়। ফল আমাদের শরীরে রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলে। অথচ আমরা ফলকে খাদ্য হিসেবে গুরুত্বই দেই না। পুষ্টিবিদরা একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের দৈনিক ১০০ গ্রাম ফল গ্রহণ করার সুপারিশ করেছেন। কিন্তু বর্তমানে আমরা আমাদের শরীরের চাহিদার তুলনায় অনেক কম পরিমাণ ফল গ্রহণ করছি।
ফলে দেহের জন্য অপরিহার্য প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ লবণ ও আঁশ থাকে। এসব পুষ্টি উপাদান রোগ প্রতিরোধ ছাড়াও খাদ্যদ্রব্য হজম, পরিপাক, বিপাক, খাবারে রুচি বৃদ্ধি, বদ হজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
বাংলাদেশে এখন ফলের মৌসুম। এ সময় বিভিন্ন রকম দেশীয় ফল যেমন- আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম, বাঙি, তরমুজ, ডালিম, আনারসের সমারোহ লক্ষণীয়। দেশে উৎপাদিত এসব ফল যেমন সস্তা ও সহজলভ্য তেমনি সুস্বাদু, তৃপ্তিদায়ক ও পুষ্টি গুণাগুণে ভরপুর।
ফলে প্রায় সব ধরনের পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। এতে প্রচুর পরিমাণে জলীয় অংশ থাকে। এ জলীয় অংশ পানির সমতা রক্ষা, খাদ্যদ্রব্য হজম, পরিপাক, বিপাক ও দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ চালাতে সাহায্য করে। দেশীয় প্রতি ১০০ গ্রাম খাদ্যোপযোগী ফলের মধ্যে জলডুবি আনারস, কালোজাম, পাকা পেঁপে, টমেটো, বাঙি, তরমুজ, জাম্বুরাতে ৯০ গ্রামেরও বেশি জলীয় অংশ থাকে।  পাকা কাঁঠাল, পাকা পেঁপে, লিচু, জামরুল, দেশি আনারস, জলপাই, পেয়ারা ও কামরাঙাতে ৮০ গ্রাম থেকে ৯০ গ্রাম জলীয় অংশ থাকে। অন্যান্য ফল যেমন আম, পাকা কলা, বেল ও পাকা তালে ৭০ গ্রামের নিচে জলীয় অংশ থাকে।
ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আঁশ থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম দেশীয় ফলের মধ্যে কালোজাম, পেয়ারা, বেল ও আতাফলে ২ গ্রামের বেশি আঁশ থাকে। কামরাঙা, আমড়া ও জামরুলে ১ গ্রাম থেকে ২ গ্রাম এবং অন্যান্য ফলে ১ গ্রামের কম আঁশ থাকে। আমাদের মোট খাদ্যের শতকরা ১ ভাগ আঁশ থাকা উচিত। আঁশ হজম, পরিপাক ও বিপাক প্রক্রিয়ায় সাহায্য এবং শর্করা, চর্বি ও আমিষ দহনে সহায়তা করে। খাদ্যের আঁশ মলাশয়ের ক্যান্সার, বহুমূত্র, স্থূলকায়ত্ব, হৃৎপি-, রক্তচাপ এপেন্ডিসাইটিস, মূত্রনালির পাথর প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে শরীরকে স্বাচ্ছন্দ্য ও সাবলীল রাখে।
ফলে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম দেশীয় ফলের মধ্যে আম, লিচু, পেয়ারা, পাকা তাল, কামরাঙা, বেল ও আতাফলে ৫০ থেকে ১০০ ক্যালরি থাকে। অন্যান্য ফল যেমন- পাকা কাঁঠাল, পাকা পেঁপে, আনারস, কালোজাম, বাঙি, তরমুজ, জাম্বুরা ও জামরুলে ৫০ ক্যালরিরও কম খাদ্যশক্তি থাকে। ফলে ক্যালরি কম থাকায় স্থূলকায়ত্ব, ডায়াবেটিস ও মেদবহুল লোকেরা অনায়াসে ফল খেতে পারেন। দেশীয় ফলে শর্করা, আমিষ ও তেল অল্প পরিমাণে থাকে। দেশীয় হলুদ রঙের ফলে প্রচুর পরিমাণ ক্যারোটিন (প্রাক-ভিটামিন ‘এ’) থাকে। ভিটামিন এ রাতকানা রোগ ও অন্ধত্ব প্রতিরোধ করে। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আম-এ ৮৩০০ মাইক্রোগ্রাম, পাকা পেঁপেতে ৮১০০ মাইক্রোগ্রাম, পাকা কাঁঠালে ৪৭০০ মাইক্রোগ্রাম, জলডুবি আনারসে ১৮৩০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন থাকে। এ ক্যারোটিনের প্রায় ৬ ভাগের এক ভাগ রোটিনল সমতুল্য বা ভিটামিন এ তে রূপান্তরিত হয়ে আমাদের শরীরে কাজে লাগে। অর্থাৎ প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে ১৩৮৩ মাইক্রোগ্রাম, পাকা পেঁপেতে ১৩৫০ মাইক্রোগ্রাম, পাকা কাঁঠালে ৭৮৩ মাইক্রোগ্রাম ও পাকা আনারসে ৩০৫ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ পাওয়া যায়। প্রাপ্তবয়স্ক একজন লোকের দৈনিক ৭৫০ মাইক্রোগ্রাম ও শিশুদের ২৫০ থেকে ৩০০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ এর প্রয়োজন। কাজেই অল্প পরিমাণ আম, কাঁঠাল ও পেঁপে খেলেই আমাদের শরীরে ভিটামিন এ এর চাহিদা পূরণ হয়। দেশীয় অন্যান্য ফলে অল্প পরিমাণ ভিটামিন এ থাকে। ভিটামিন এ শরীরের চাহিদামতো গ্রহণ করলে রাতকানা রোগ ও অন্ধত্ব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
ফলে অল্প পরিমাণ ক্যালসিয়াম থাকে, যার পরিমাণ প্রতি ১০০ গ্রামে ১০ থেকে ৫০ মিলিগ্রাম। এ সময়ের ফলে লৌহও কম পরিমাণে থাকে। এদের মধ্যে প্রতি ১০০ গ্রাম তরমুজে ৭.৯ মিলিগ্রাম, জামে ৪.৩ মিলিগ্রাম ও অন্যান্য ফলে ১.৫ মিলিগ্রামের কম লৌহ থাকে। লৌহ রক্তস্বল্পতা দূর করে। ফলে কিছু পরিমাণে ভিটামিন বি-১ ও ভিটামিন বি-২ থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম ফলের মধ্যে পাকা আম, কাঁঠাল, বাঙি, আনারস, আমড়াতে ০.১০ থেকে ০.২৮ মিলিগ্রাম ও অন্যান্য ফলে ০.১০ মিলিগ্রামের কম ভিটামিন বি-১ থাকে। ভিটামিন বি-১ খাদ্যদ্রব্যকে ক্যালরিতে রূপান্তর, হজম, পেশিগুলোকে সবল ও মানসিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতি ১০০ গ্রাম ফলের মধ্যে পাকা কাঁঠাল ও আতাফলে যথাক্রমে ০.১৫ মিলিগ্রাম ও ০.১৪ মিলিগ্রাম এবং অন্যান্য ফলে ০.১০ মিলিগ্রামের কম ভিটামিন বি২ থাকে। ভিটামিন বি২ এর অভাবে মুখের কোণায় ও ঠোঁটে ঘা, ত্বকের স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্যতা নষ্ট ও নাকের দুই পাশে চর্মরোগ হয়।
ভিটামিন ‘সি’ এর প্রধান উৎস ফল। দেশীয় ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ থাকে। ভিটামিন ‘সি’ মাঢ়িকে মজবুত, ত্বককে মসৃণ, সর্দি-কাশি থেকে রক্ষা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। প্রতি ১০০ গ্রাম দেশীয় ফলের মধ্যে পাকা আমে ৪১ মিলিগ্রাম, পাকা পেঁপেতে ৫৭ মিলিগ্রাম, কালোজাম ৬০ মিলিগ্রাম, কামরাঙা ৬১ মিলিগ্রাম, আমড়া ৯২ মিলিগ্রাম, পেয়ারায় ২১০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা কাঁঠালে, লিচু, আনারস, বাঙি, জাম্বুরা ও আতাফলে ২০ মিলিগ্রাম থেকে ৪০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ থাকে। পুষ্টিবিদরা একজন বয়স্ক লোকের দৈনিক ৩০ মিলিগ্রাম ও শিশুদের ২০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ গ্রহণ করার সুপারিশ করেছেন। দেশীয় ফল রান্না করে খেতে হয় না বলে এসব ফলের পুরো ভিটামিন ‘সি’ আমাদের শরীরে কাজে লাগে। চোখ, দাঁত, মাঢ়ি, হাড়, রক্ত ও ত্বকসহ শরীরের প্রতিটি অঙ্গের পুষ্টি জোগাতে ফলের গুরুত্ব অপরিসীম। শরীরের চাহিদামতো প্রতিদিন নিয়মিত ফল গ্রহণ করলে সুস্থ-সবল দেহ নিয়ে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে পুষ্টি সমস্যা সমাধান, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য ফল বৃক্ষের অবদান অপরিসীম। কাজেই আগামী প্রজন্মের খাদ্য, পুষ্টি, অর্থ এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পরিকল্পিতভাবে ফলদ বৃক্ষ রোপণ ও সংরক্ষণ করার জন্য সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে। সারা বছর ফল প্রাপ্তি নিশ্চিতের লক্ষ্যে উপযোগী জাত উদ্ভাবন করতে হবে। উচ্চফলনশীল জাতের ফলের চারা বা কলম সহজলভ্য করতে হবে। বাংলাদেশে পাহাড়ি এলাকায় প্রচুর পতিত জমি রয়েছে যেখানে অনায়াসেই উন্নত জাতের দেশি  ফলের আবাদ সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। আমার বিশ্বাস, দেশি ফলের জাত উদ্ভাবন ও চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি আয় ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ সম্ভব হবে।

মো. মোশারফ হোসেন*
*অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ), কৃষি মন্ত্রণালয় ও নির্বাহী পরিচালক (অ. দা.), বারটান

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon